লালন উত্তরসাধক খোদা বক্স সাঁই | আসমান ফকির।
ফকির লালন সাঁইজীর তৃতীয় সিঁড়ির শিষ্য খোদা বক্স সাঁই এর দীক্ষাগুরু মনিরুদ্দীন শাহ্ ছিলেন লালন সাঁইজীর সাক্ষাত শিষ্য ও কালাম লিপিকার। বাবা কফিলউদ্দীন ও মা ব্যাশোরণ নেছা’র ঘরে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার জাঁহাপুর গ্রামে ৩০ চৈত্র, ১৩৩৪ (১৯২৮) সালে খোদা বক্স জন্মগ্রহণ করেন। খোদা বক্স লেখাপড়া করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। স্ত্রীর নাম রাহেলা খাতুন ওরফে লাইলি বেগম। প্রথম জীবনে খোদা বক্স ছিলেন যাত্রাদলে। সেখানেই সূচনা তাঁর সংগীতজীবনের। পরবর্তী সময়ে শুকচাঁদ শাহের কাছে ফকিরি মতের শিক্ষা নিয়ে লালন প্রশিষ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান হন। ১৯৭৬ সালে শুকচাঁদ শাহের স্ত্রী গুরুমা বানু নেছার কাছে খেলাফত নিয়ে শুরু হয় ফকিরী জীবন। তার সংগৃহীত ২৫টির স্বরলিপি নিয়ে ১৯৮৬ সালে লালন সংগীত স্বরলিপি নামে গ্রন্থ প্রকাশ করে লালন কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে লালন সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন।
১৯৮৫ সালে খোদা বক্স শাহ্ কে ‘বাংলা একাডেমী ফেলো’ পদ প্রদান করা হয়। ১৯৮৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯০ সালের ১৫ জানুয়ারি তিরোভাব নেন খোদা বক্স শাহ্। এ দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর তাঁর বাস্তুভিটায় অনুষ্ঠিত হয় সাধুসঙ্গ। এখানেই খোদা বক্স শাহ জীবদ্দশায় গুরু শুকচাঁদ শাহের তিরোধান দিবস ১০ই বৈশাখে সাধুসঙ্গের আয়োজন করতেন। ১৯৯১ সালে খোদা বক্স শাহ্ কে দেয়া হয় মরণোত্তর একুশে পদক। পুত্র আবদুল লতিফ শাহের মতে তার বাবা প্রায় ৯৫০টি গান রচনা করেছেন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরন করে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে লতিফ শাহ্ নিজেও শক্ত অবস্থান গড়ে নিয়েছেন ভক্তদের মাঝে। দেশ বিদেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর। বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৯৭ সালে খোন্দকার রিয়াজুল হক এর সম্পাদনায় খোদা বক্স শাহ্’র ১৪৮টি গান মুদ্রিত হয়েছে ‘মরমী কবি খোদা বক্স শাহ্’ গ্রন্থে।
- আজমল শাহ্'র কণ্ঠে খোদা বক্স সাঁই রচিত গানঃ
শুভ সাধুসঙ্গ লয়ে সাঙ্গপাঙ্গ বন বিহঙ্গ প্রসন্ন করিলে।
- বজলু শাহ্’র কণ্ঠে খোদা বক্স সাঁই রচিত গানঃ
দেবতা হারিয়ে পূজারী কাঁদবি কতদিন।
- খোদা বক্স সাঁই এর স্বকণ্ঠে লালন সাঁইজীর পদঃ
চিরদিন দুঃখের অনলে প্রান জ্বলছে আমার।
পাপ পুণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই।
মুর্শিদের ঠাঁই নে নারে তার ভেদ বুঝে।
আসমান ফকির l ১৩ই পৌষ, ঢাকা।
ashmanfokir@gmail.com